একজন ভালো ইঞ্জিনিয়ারের কাজ বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে মানুষের জীবনকে সহজ, সুন্দর ও নিরাপদ বানানোর জন্য যন্ত্র বা ডিজাইন নিখুঁতভাবে বানানো। ২০০৮ সাল থেকেই আমি সিস্টেম ডিজাইন, ফুল প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, কগ্নেটিক ডিজাইন এর সাথে অনেক গভীরভাবে সম্পৃক্ত। আমার হাত দিয়ে প্রায় ২০০ টির উপর নতুন প্রডাক্ট develop করার সুযোগ মহান স্রষ্টা আমাকে ইতিমধ্যেই দিয়েছেন যা লক্ষ লক্ষ মানুষের কল্যাণে কাজে লাগছে। আমি দিন রাত গবেষণায় আমার জীবনের অনেক সময় ব্যায় করি। আমি একজন বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার এবং Businessman । আমায় যে লক্ষ লক্ষ মানুষ চিনে আর ভালবাসে তারা জানে আমার সম্পর্কে।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান যতোটুকু বলে ভালো মানের ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে রাজনীতি করার কোন প্রয়োজন নেই। ইঞ্জিনিয়ারিং অনেক জটিল বিষয়। বুয়েট থেকে হয়তো বা কেউ কোনরকমে টেনেটুনে পাস করতে পারে, হয়তোবা পাস করার পরে ভালো রাজনীতিবিদও হতে পারে, কিন্তু ভালো ইঞ্জিনিয়ার হবে না এইটা শতভাগ গ্যারেন্টেড। তার ওই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া বা না পড়াতে কোন কিছু আসে যায় না। সে আসলে বুয়েট একটি সিট নষ্ট করল। ইন্টারমিডিটে হয়তো বা সে ভালো ছাত্র ছিল কিন্তু সময় তার থেকে তার অপকর্মের জন্য সমস্ত প্রকার প্রতিভা ছিনিয়ে নিয়েছে। তার কাছে বুয়েটের সংজ্ঞা আর আমার কাছে সংজ্ঞা সম্পূর্ণ আলাদা।
রাজনীতি মানে এক সময় সমাজসেবা ছিল (১৯৪০ – ১৯৭১), দেশকে শোষকের হাত থেকে মুক্তি করা ছিল । রাজনীতির সংজ্ঞা এবং স্বার্থ যুগের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়ে গেছে।
BUET থেকে পড়াশোনা করার পর কেউ যদি ভালো রাজনীতিবিদ হতে চায় হতে পারে। (আসলে exactly কতজন হয়েছে আমার জানা নেই) তবে খুব একটা বেশি না। এই হাতে গোনা ০.০১% দের জন্য ৯৯.৯৯% ইঞ্জিনিয়ারদের জীবনকে ভীতিকর করে তোলাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্র শিবির, হেফাজত ইসলাম বা এই ধরনের যত রাজনৈতিক দল আছে কারো কোন ধরনের শোডাউন অথবা হস্তক্ষেপ BUET এর শিক্ষা ব্যবস্থার উপর কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
আমি পাঁচ বছর ক্যাম্পাসে থেকেছি। অত্যন্ত কাছ থেকে এবং খুব ভালো করে রাজনীতিকে দেখেছি যে আসলে কি কি হয়। খুব একটা ভালো কিছু বা অনেক কল্যাণকর কিছু আমার চোখে ধরা পড়েনি। তবে হ্যাঁ চাঁদাবাজি, প্রতি সপ্তাহে মারামারি, পিটিয়ে অর্ধ জখম করা, ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া, দীপকে খুন করা, শিক্ষককে থ্রেড দেওয়া ও আপমান করা, প্রেসার দিয়ে পরীক্ষা পেছানো, অপ্রাসঙ্গিক দাবি জোর করে BUET প্রশাসনের থেকে আদায় করে নেওয়া, নিজেকে কাম্পাসের মালিক ভাবা এমন অনেক কিছুই দেখেছি। এগুলোতে পরিবেশ এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মান শিক্ষকদের মন মানসিকতা সবকিছুকে নষ্ট হতে দেখেছি।
আদালত অবশ্যই বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ জায়গা। আদালতের রায় অবশ্যই শিরোধার্য, কিন্তু সেই রায় যখন দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কে নিয়ে তখন সেই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান শিক্ষার্থীদের মতামত, শিক্ষকদের মতামত, এলমনায়ের মতামত অথবা বড় কোন শুনানির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নিলে অনেক বুদ্ধিমানের পরিচয় হতো। জোর করে তো বলাই যায় যে সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠে, কিন্তু সেটা তো সৃষ্টির নিয়ম না।
ব্যক্তিগতভাবে আমার মতামত আমি কখনোই কোন অবস্থাতেই BUET এ কোন ধরনের কোন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের পক্ষে নই।
এখানে পড়াশোনা করতে অনেক মেধার প্রয়োজন হয় এবং আমার খুব কাছ থেকে অনেক দেখা আছে এই রাজনীতি করার চক্করে এবং লোভে পড়ে আমার অনেক বন্ধু এবং ছোট ভাই বছরের পর বছর BUET থেকে পাস করতে পারে নাই এবং অনেকেই ড্রপ আউট হয়েছে অথবা খুব দুর্বল মানের একটি রেজাল্ট নিয়ে কোনরকমে টেনেটুনে বেরিয়েছে। অধিকাংশ এখন আফসোস করে যে জীবনের এই মূল্যবান সময় কেন এভাবে নষ্ট করেছিলাম !
একজন ১৭-২১ বছর বয়সের মাসুম যুবক বা যুবতী আসলে রাজনীতির কিছুই বোঝেনা, এতটুকুও জানেনা। রক্ত গরম থাকে তো , ধরাকে শরা মনে করে না। তারা একটা অদৃশ্য মরীচিকার পেছনে লোভ নিয়ে ঘুরতে থাকে শর্টকাট রাস্তায় জীবনে ভালো করার জন্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদেরকে একটি লাঠি অথবা একটু অস্ত্র হিসাবে তার উপরের রাজনীতিবিদরা ব্যবহার করে এবং পরে ছুড়ে ফেলে দেয়।
আমি খুব সামান্য মানুষ, আমার ব্যক্তিগত প্রফেশন নিয়ে অনেক ব্যস্ততা থাকে। এখন এই ইসুগুলিতে আমার কিছু আসে যায় না কিন্তু তারপরেও আমি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করব যাতে কোন না কোন একটি জাদুতে বুয়েট থেকে এই রাজনীতির কালো ছায়া বিদায় নেয়। এবং এই প্রতিষ্ঠানটি যাতে আরো বহু যুগ ধরে মেধাবীদের একটি ভরসার জায়গা হতে পারে। যেখানে ভর্তি হওয়ার পরে তার সিনিয়র বড় ভাই বা বোনেরা তাকে ভালবাসবে, জীবনের সঠিক রাস্তা দেখাবে, মেধার আদান প্রদান করবে , কিন্তু সেই জুনিয়রকে কোন প্রকার র্যাগিং, মারামারি, অথবা কোন অত্যাচারের অথবা কোন তথাকথিত বাচ্চা পাতি নেতার পা চাটাচাটি করতে হবে না।
আমার বয়স ৩৬ বছর। জীবন অনেক কিছু দেখিয়েছে আমাকে। ছলনা এবং বলপূর্বক কোনো কিছু করলে প্রকৃতি সব সময় সেখানে ব্যাকফায়ার করে। হিটলারের সাথে করেছে, মুসেলিনির সাথে করেছে, প্রকৃতি কাউকেই ছাড় দেয়নি। আমাদের দেশের জন্যই ব্যাতিক্রম হবে না। এখনো সময় আছে এ বিষয়গুলোকে বিবেচনা করার। এই দেশটাকে আমরা সর্বোচ্চ যতখানি নষ্ট করা যায় তার থেকে বেশি পরিমাণ নষ্ট করে ফেলেছি। সমস্ত প্রকার প্রশাসনিক অবকাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছি। একজন সরকারি সামান্য কর্মকর্তাকে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে দিয়ে দূর থেকে করতালি দিয়ে বাহবা দিয়েছি। দেশকে যারা লুটছে, দেশের যারা প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতি করছে, জনগণের কাছ থেকে চাঁদা ঘুষ আদায় করছে, জনগণের জীবনকে যারা অতিষ্ট করেছে তাদের কাউকেই আমরা সাজা দেইনি বরংচ ঘুষ খেয়ে আমরাই তাদের আইনের ফাক ফোকর দিয়ে বের করে দিয়েছে। কি মনে হয় ! এত সহজ সব কিছু । ধরিত্রী পাপের বোঝা বইতে বইতে যখন ক্লান্ত হয়ে যায় তখন সেখানে পূর্বের সব কিছু ধ্বংস হয় নবনির্মাণের জন্য। এই ধ্বংস ৫, ১০, ২০ বছর যখন ই হোক আমাদের দেশে হবেই। পুরাতন সম্পূর্ণ ধ্বংস হবে নবনির্মাণের জন্য । যারা সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাস করেন সে তিনি ধর্মের ই হন না কেন তারা সমস্ত ধর্মের বইতে এই কথাটি দেখতে পাবেন।
BUET কে এবং এখানে পড়াশোনা করা বা হলে থাকার পরিবেশকে মহান সৃষ্টিকর্তা যেন রক্ষা করেন এই সুস্থ ধারার নামে নোংরা রাজনীতির বলয় থেকে। যারা বুয়েটের ফর্মটি পর্যন্ত তুলতে পারেননি, বা ভর্তি পরীক্ষায় বসতে পারেননি, বা আসলে জানেই না যেখানে কি হয় তারা যেন বুয়েটের শিক্ষার পরিবেশ কে নষ্ট না করতে পারে।
লেখা : Barun Kanti Ghosh
মূল পোস্ট : Facebook Wall of B. K. Ghosh