তামিম এবং মিরাজের ফোনালাপ যদি স্ক্রিপ্টেড হয়ে থাকে বিসিবির চুক্তিভুক্ত একজন ক্রিকেটার হিসেবে মিরাজকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা উচিত। ক্রিকেটারদের বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত আইসিসির নিশ্চয়ই কোনো ধারা আছে। তামিম ইকবাল বিসিবির চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটার নয়, তবে ডিপিএল এবং বিপিএল আইসিসির অনুমোদিত দুটো লীগে সে এখনো খেলে, সুতরাং আইসিসির নিয়মকানুন তার জন্য প্রযোজ্য।
যদি এই ফাঁস হওয়া ফোনালাপ নগদ এর প্রমোশন কার্যক্রম হয়ে থাকে, নগদের বিরুদ্ধে সামাজিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের অভিযোগে মামলা করা উচিত, এবং তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া আবশ্যক। কারণ ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে বিজ্ঞাপনের ইস্যু বানিয়ে রাষ্ট্রের মৌলিক বোঝাপড়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের এই স্ক্রিপ্ট রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল।
কেন এই জিরো টলারেন্স নীতি
প্রথমত, প্রাইভেসি ব্রিচিং এর মতো অতি স্পর্শকাতর বিষয়কে নরমালাইজ করা। ফোনালাপ ফাঁস ইতোপূর্বেও বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার হয়েছে। দুজন মানুষের ব্যক্তিগত আলাপ তখনই ফাঁস হয় যখন প্রযুক্তির অপব্যবহার করে তাদের ফোনে আড়িপাতা হয়। দুজন পাবলিক সেলিব্রিটির ফোনালাপ ফাঁস করে দেয়া হচ্ছে, তাহলে দেশের টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেমে সিকিউরিটি কোথায় থাকলো? এই আলাপে কোথাও কোনো ডিসক্লেইমার যদি দেয়াও থাকে যে এটা নিছক বিনোদনের উদ্দেশ্যে নির্মিত বিজ্ঞাপন, তবু এটা প্রতারণাই থেকে যায়৷ ধর্ষণ যেমন বিনোদন হতে পারে না, পর্ণগ্রাফিকে সরাসরি প্যাট্রোনাইজ করা যায় না— ফোনালাপ ফাঁস নিয়ে বিজ্ঞাপন করাটাও সেই পর্যায়ের নোংরামিই।
দ্বিতীয়ত, এই আলাপে ব্যবহার করা হয়েছে খেলাযোগকে, যা অন্য একটি মিডিয়া। আপনি একটি জাতীয় মিডিয়াকে যদি এভাবে অপব্যবহার করেন, তার মানে আপনি পুরো ব্যাপারটা সাধারণ মানুষকে বিশ্বাস করাতে প্রাণপণে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। অর্থাৎ আপনার মূল সেলিং পয়েন্ট ধোঁকাবাজি
তামিম ইকবাল ১৮ বছর ধরে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট খেলছে। মাত্র ৩৫-৩৬ বয়সেই অর্থ, খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা সব পাওয়া হয়েছে ক্রিকেটের কল্যাণে, কারণ এদেশের তরুণ প্রজন্ম ক্রিকেটে আগ্রহী এবং সেজন্য ক্রিকেটের মার্কেট রয়েছে। মানুষের বিশ্বাস এবং ভালোবাসার প্রতি তার সুনির্দিষ্ট দায়িত্ববোধ থাকা উচিত। নিজের ফেসভ্যালুর প্রতি যথচ্ছ অনাচার করার অধিকার তার নেই, মনে রাখা উচিত, কারণ তার ফেসভ্যালু পাবলিক প্রোপার্টির অংশ! ক্রিকেটসূত্রে যা রোজগার হয়েছে, একটা বিজ্ঞাপন থেকে পাওয়া টাকা সে তুলনায় অতি নগণ্য। এইটুকু টাকার লোভে তার এমন নোংরামি কনসেপ্টের বিজ্ঞাপনে সম্মতি দেয়াটা সমকালীন বাংলাদেশের অন্যতম জঘন্য ঘটনা। আমি একে বলি ‘সোশ্যাল পর্ণোগ্রাফি’!
যে কোনো ন্যক্কারজনক এবং ঘৃণ্য পলিসির কালচার এভাবেই তৈরি হয়।
আমি চাই তামিম তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাক।
নগদ যদি ভেবে থাকে ‘ব তে বোকা না হইয়া ন-তে নগদে ফিরে আসো’ জাতীয় চটুল এবং নেগেটিভ ক্যাম্পেইনের সাথে ‘ফোনালাপ ফাঁস’ একই অর্থ বহন করে, সেক্ষেত্রে তাদের উপলব্ধির জায়গাতেই বিরাট ঘাপলা, এবং সামগ্রিকভাবে রুচিবর্জিত।
যদি কাউন্টার আর্গুমেন্ট আসে নগদের সাফল্য এটাই যে আমাদের মতো অনেক মানুষ যারা সম্পূর্ণ অজ্ঞ, তারাও নগদ নিয়ে কথা বলছে-লেখালিখি করছে, তাদের বিজনেস প্রমোশন হয়ে গেল প্রকারান্তরে, তাহলে বলবো রাষ্ট্রীয় মদদে ‘প্রাংক এক্টিভিটি’ যদি প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায় এবং সেখানে পাবলিক ফিগাররা অর্থের বিনিময়ে স্বেচ্ছায় সামাজিক পর্ণগ্রাফি তে অংশগ্রহণ করে, সেই সমাজ এবং রাষ্ট্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, ভালোবাসা নির্মূল হয়ে যাবে। গায়ক খালিদ বা সাদি মহম্মদের মতো কেউ আকস্মিক মৃত্যু বরণ করলেও শোক বা সহমর্মিতার বদলে মানুষ প্রথমেই বলবে ‘এটাও কোনো প্রমোশন নয় তো! লাশ সৎকারের পূর্ণ ভিডিও না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাস করছি না’
ডিয়ার নগদ এবং কোং, ন-তে কেবল নোংরামি নয়, নান্দিকতা-নিবেদিতা সহ বহু সুন্দর শব্দও হয়, যদি ঘুরেফিরে নোংরামিই আপনাদের অধিক আকর্ষণীয় লাগে, ঢাকার যাবতীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে বিনিয়োগ করুন, ওটাই আপনাদের প্রকৃত পটেনশিয়ালিটি। সেখানে ক্যাম্পেইন কার্যক্রমে তামিম ইকবাল আর মিরাজকে হাজারিবাগের ট্যানারিতে নামিয়ে লম্ফঝম্প করান, নিশ্চয়তা দিচ্ছি এখনকার ১১ গুণ বেশি হাইপ পাবেন!
আমি লেখা শুরু করেছিলাম ‘যদি’ ব্যবহারের মাধ্যমে৷ অর্থাৎ ক্ষুদ্র হলেও একটা সম্ভাবনা আছে এটা প্রকৃত ফোনালাপ।
আমার প্রশ্ন, খেলাযোগ্য ব্যতীত অন্য কোনো চ্যানেলে এ নিয়ে রিপোর্ট কি হয়েছে?
দ্বিতীয় প্রশ্ন, দেশ রূপান্তরে একটা সংবাদ পড়লাম নগদের মার্কেটিং হেডের বরাতে বলা হচ্ছে এই ফোনালাপে তাদের সম্পৃক্ততা নেই, ৭টায় তামিম ইকবাল লাইভে আসবে, তখনই সব জানা যাবে। যদি তামিমের লাইভে নগদের প্রচারণার ব্যাপারটি আসে, তখন কি মিডিয়াতে মিথ্যা কথার জন্য তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে?
ধরলাম নগদ বা কোনো বাণিজ্যিক কোনো প্রতিষ্ঠানই ইনভলভ নয় প্রমাণিত হয়, এবং আদতেই ফোনালাপ ফাঁস হয়, রাষ্ট্র কি তদন্ত করবে কীভাবে দুজন পাবলিক ফিগারের আলাপ ফাঁস হলো? প্রাইভেসি ব্রিচিংয়ের চাইতেও গুরুতর ব্যাপার হলো জনগণ যে নিকৃষ্ট সারভিলেন্সের অধীনে রয়েছে, এই ভীতির দায় কে নিবে?
সেক্ষেত্রে নগদকে নিয়ে করা সংশয়ের জন্য কি দু:খ প্রকাশ করা যথেষ্ট হবে? এটাও তাদের কর্মফল, কারণ তাদের অতীত মার্কেটিং কার্যক্রমগুলো এত বেশি বিতর্কিত, একা আমি নয়, বহুজনে সন্দেহ প্রকাশ করছে এই ঘটনায় তাদের ইন্ধন রয়েছে৷ প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ড হিসেবে নগদের এই ব্যর্থতা অমার্জনীয় এবং লজ্জাজনক!
[লেখাটি “ইঞ্জিনিয়ার’স ডায়েরি” ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত ]