December 23, 2024, 7:54 pm

ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোর যত ভাঁওতাবাজি

  • Published : বৃহস্পতিবার, মার্চ ২১, ২০২৪
  • 125 Views
[লেখাটি “ইঞ্জিনিয়ার’স ডায়েরি” ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত ]
একটু সিরিয়াস কথা বলি এবার।
আজকের দিনের সবচেয়ে হার্টব্রেকিং লাইন সম্ভবত ছবির এই লাইনটা। বুয়েট এডমিশন টেস্টের ফাইনাল রেজাল্টের পিডিএফ শিটে নিজের নাম খুজে না পাওয়া। আমি জানি, এই লাইনটা যারা ইতোমধ্যেই দেখে ফেলেছ, তারা অনেক হতাশ। খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যেখানে তুমি পড়তে চেয়েছিলে, সেখানে পড়তে না পারলেই কি সব শেষ?
একটু গোড়া থেকে বলি। ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি, বিশেষ করে এই বুয়েট ভর্তির ফ্যানা তুলে প্রতি বছর কোচিং সেন্টার, প্রাইভেট ব্যাচগুলিতে ক্লাস শুরু হয়। এই ক্লাস যেসব ভাইয়া নেন, তাঁরা অনেক সময় ‘মোটিভেশন’ দিতে গিয়ে নির্দিষ্ট ইউনিভার্সিটির প্রতি একরকম ফেক মোহ তৈরি করে দেন। ব্যাপারটা যে তাঁরা সাবকনসাস মাইন্ডে করেন তা কিন্তু নয়। ইচ্ছাকৃত এবং অনেক সময় নিজের সস্তা ইন্সটিটিউশনাল প্রাইডের এক্সপোজার হিসেবে তাঁরা এই কাজটা করেন। সদ্য এইচএসসি পাশ করা একজন শিক্ষার্থী এইসব ভাইয়াদের থেকে জানতে পারে, নির্দিষ্ট একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে না পারলে তাঁর জীবন শেষ। অন্তত শেষ না হলেও এক জীবনে বড় কিছু করার যে স্বপ্ন তাঁর ছিল, সেই স্বপ্ন থেকে সে অনেকখানিই পিছিয়ে গেল।
এই সস্তা মোটিভেশন যেমন বিশেষ একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মোহ তৈরি করে দেয়, তেমনি বিশেষ ঐ একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারার একটা অনিশ্চয়তা তৈরি করে দেয়। এডমিশনের সময়ে একজন শিক্ষার্থী এমনিতেই ন/*রকয/*ন্ত্রণা ভোগ করে, এর মধ্যে এই বিশেষ প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি এই সস্তা মোটিভেশন সেই শিক্ষার্থীকে উপরে তো তোলেই না, বরং আরো নিম্নগামী করে দেয়। এই অনিশ্চয়তার শেষ দৃশ্যে যখন সেই শিক্ষার্থী আসলেই ওখানে ভর্তি হতে পারেনা, তখন তাঁর মাথায় উদ্ভট চিন্তা ঘোরাফেরা করে। কিছুটা সময়ের জন্যেও আত্মহ *ননের চিন্তাটি তাঁর মাথায় ঘুরতে থাকে। কারণ ভাইয়া বলেছিল-
“এখানে ভর্তি হতে না পারলে জীবন বৃথা”
আমার কাছে তাই মনে হয় এই ফেক মোহ থেকে সবার বেরিয়ে আসা খুবই জরুরী। একটি ইন্সটিটিউশন যে মানুষের লাইফ ডিসাইড করার মাইনর প্রভাবক, কোনমতেই মেজর প্রভাবক নয়- এই ব্যাপারটা আমাদের বোঝা খুবই জরুরী। প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর বোঝা জরুরী, এই জীবনে তাঁর ক্যারিয়ার ডিসাইড করার মেজর যদি কোন স্ট্যান্ডার্ড থাকে সেটা সে নিজে। অবশ্য এই কুৎ/*সিত দৃশ্যের দেখা যে শুধু এডমিশন টাইমেই পাওয়া যায় এমনটাও কিন্তু না।
এসবের শুরুটা হয় খুব ছোটবেলায়। ‘শহরের সেরা কিন্ডারগার্ডেন’, ‘সেরা স্কুল’ ‘দেশসেরা কলেজ’ ‘বুয়েট/মেডিকেল/সেরা ইউনিভার্সিটি’ সবই থাকবে এই লিস্টে। কিন্ডারগার্ডেনে ভর্তি করার সুখানুভূতি বা দুঃখবোধ থেকে তা আজীবন চলতে থাকে। অন্তত আন্ডারগ্রাজুয়েশনে ভর্তি করার আগ অব্দি।
এই আন্ডারগ্রাজুয়েশনে ঢোকার আগে অনেকে নির্দিষ্ট কিছু ইন্সটিটিউশনে এডমিশন নেওয়াটাকেই ‘জীবন’ বানিয়ে ফেলে, যেটার গল্প একটু আগেই বললাম ৷ যারা এই ‘জীবন’ বানিয়ে ফেলার দলে তাদের একটা গল্প বলি৷ এই পৃথিবীতে যতগুলো ‘আন্ডারগ্রাজুয়েশন এডমিশন টেস্ট’ আছে তার মধ্যে সবথেকে কঠিন আর প্রেস্টিজিয়াসগুলির একটা হল IIT. ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর এখানকার CSE এর একজন ছাত্র পিচিকালা সিদ্ধার্থ নিজ ক্যাম্পাসে সুই /*সাইড করে। এছাড়া নভেম্বরেই ফাতিমা নামে ‘আই আই টি মাদ্রাজ’ এর একটি মেয়ে সুই */সাইড করে। এরকম উদাহরণ আছে অহরহ। এর অর্থ পরিষ্কার, রেস্পেক্টিভ ইনস্টিটিউশনে ভর্তি ছাড়াও তাদের কাছে জীবনের অর্থ অন্যকিছু ছিল, যেটার অভাব ছিল তাঁর কাছে।
তোমরা যারা ভাবছ এই বুয়েটে আসাই জীবনের অন্যতম উদ্দেশ্য, তাঁদের মনে করিয়ে দিই এই বুয়েটেই গ্রাজুয়েট হবার ঠিক আগ মুহুর্তেও আত্মহ /*ত্যার উদাহরণ আছে। এই বুয়েটের গ্রাজুয়েটই পাশ করে বের হয়ে আমেরিকায় ভার্জিনিয়া টেক ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি গ্রাজুয়েট থাকার সময় আত্নহ /*ত্যা করেছে। কারণ একটা সময়ে গিয়ে আমরা সবাই বুঝতে পারি, জীবনের লক্ষ্য ও স্বাদ কখনই একটা বিশেষ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারার মধ্যে থাকেনা। সে যাক, আসল কথায় ফিরে আসি।
এই যে এক জীবন নিয়ে আমরা পৃথিবীতে আসি, সেটা নিতান্তই ছোট। ছোটখাটো এই ‘ড্রামাটিক লাইফ’ এ আমরা সবাই যে বিজয়ী তা আমরা মানতে পারিনা। ১০০০ টা দরজার একটি ‘চিচিং ফাঁক’ বলাতে যখন না খোলে, আমরা হাঁপিয়ে উঠি। পাশের দরজায় যাইনা। খুলতে চেষ্টা করিনা। জীবনের লক্ষ্য যদি বাঁচার চাইতেও সাফল্য হয় তাহলেও সেই সাফল্যের লক্ষ্য কোন একটি পরীক্ষায় সাফল্য নয়, জীবনের চূড়ান্ত সাফল্য অর্জনই৷ চাওয়া-পাওয়ার হিসাব যদি একান্তই মেলাতে হয়, সেটি এখন নয়, বরং শেষে! এই উপদেশ যে শুধু যারা এডমিশন সেশনে নিজ লক্ষ্য পূরণে ব্যার্থ হয়েছে তাদের জন্যে তা নয়, যারা নিজ লালসা চরিতার্থ করতে পেরেছে তাদের জন্যেও।
সবার কাছেই জাদুর বাক্স আছে, সেটি খুলব নাকি বন্ধ রাখব নাকি খুলে আর ভেতরে হাতড়াব না সেটা একান্তই আমাদের নিজস্ব ব্যাপার।
– সামিয়াতুল সামি
Facebook Comments Box

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News on this category